বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির (বিএফডিসি) সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে দ্বন্দ্বে চিত্রনায়ক জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণ আক্তারকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জয়ী ঘোষণা করে আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে সমিতির নির্বাচনে জায়েদ খানকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কমিশনের সিদ্ধান্ত বহাল থাকলো। এখন চিত্রনায়ক জায়েদ খানই থাকছেন শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক।

 

বুধবার (২ মার্চ) বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ রায় দেন।

এদিন আদালতে জায়েদ খানের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি। নিপুণের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।

জায়েদ খানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির জায়েদ খানকে সাধারণ সম্পাদক জয়ী ঘোষণা করেছিল। হাইকোর্টের রায়ের ফলের এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকলো। নিপুণকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত রায়ে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জায়েদ খান দায়িত্ব পালন করে যাবেন।

 

এদিকে নিপুণ আক্তারের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।

এর আগে মঙ্গলবার (১ মার্চ) একই বেঞ্চে এ সংক্রান্ত রুলের ওপর শুনানি হয়। এরপর আরও শুনানি ও আদেশের জন্য বুধবার (২মার্চ) দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। তারই ধারাবাহিকতায় আজ এই রায় দেন আদালত।

এদিকে রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জায়েদ খান সাংবাদিকদের বলেন, জনপ্রিয়তাই আমার শত্রুতার কারণ। শিল্পীরাই আমার বিরোধিতা করেছেন। আদালতের রায়ের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমার জন্য অনেক শিল্পী ও শুভাকাঙ্ক্ষী রোজা রেখে দোয়া করেছেন। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।

অন্যদিকে বিএফডিসির সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আবারও আপিল করার কথা জানিয়েছেন নিপুণ আক্তার

 

গত ২৮ জানুয়ারি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচন হয়। প্রাথমিক ফলে সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় জায়েদ খানকে। পরে জায়েদের বিরুদ্ধে ‘টাকা দিয়ে ভোট কেনা’সহ নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অভিযোগ আনেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিপুণ। এমনকি এ পদে পুনরায় ভোটের দাবিও তোলেন।

নিপুণের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জায়েদ খানের পদ বা প্রার্থিতা বাতিল হবে কি না- সে বিষয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে এফডিসিতে বসেন শিল্পী সমিতির আপিল বোর্ড। এরপর বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান নিপুণকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন।

এদিকে আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্তকে ‘বেআইনি’ বলে দাবি করেন জায়েদ খান। ফলে ৭ ফেব্রুয়ারি বোর্ডে তার প্রার্থিতা বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন তিনি। রিটের শুনানি নিয়ে আপিল বোর্ডের দেওয়া সিদ্ধান্ত ওইদিনই স্থগিত করেন হাইকোর্ট।

এরপর হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন নিপুণের আইনজীবী

৯ ফেব্রুয়ারি আপিলের শুনানি নিয়ে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেন চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। একই সঙ্গে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদের ওপর ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থা জারি করা হয়।

এসময়ের মধ্যে জায়েদ-নিপুণ কেউ সম্পাদকের চেয়ারে বসতে পারবেন না বলে জানানো হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের আদেশের ওপর চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ এবং স্থিতাবস্থা বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে হাইকোর্টকে রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন।