চাল, ডাল, তেলসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতির মধ্যে দেশে ভরা মৌসুমেও গত এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে

শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ। এক মাস আগে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে যার দাম ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা।

 

ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, এক সপ্তাহ আগেও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে। সপ্তাহের ব্যবধানে গড়ে দাম বেড়েছে ১০ টাকা।

 

নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে পেঁয়াজের এমন দামে অসন্তোষ জানিয়ে রামপুরার বাসিন্দা ইজাজুল ইসলাম বলেন, “বাজারে সবকিছুর দাম বেশি, এর মধ্যে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে কয়েক দিনের মধ্যে আবার বেড়ে গেল।

 

“আমরা বিগত বছরগুলোতে দেখে এসেছি যে, এই সময়ে পেঁয়াজের কেজি থাকত ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে, কিন্তু এবার যেন অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়েছে।”

 

তিনি বললেন, “সামনে রোজা আসছে, এখন থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় আমাদের মত স্বল্প আয়ের মানুষগুলোর কষ্ট আরও বেড়ে যাবে।”

 

ব্যবসায়ীরা জানান, পেঁয়াজের মৌসুমে আমদানি কম থাকে বলে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। আমদানি বাড়ানো গেলে দাম কমতে পারে।

 

শুক্রবার নগরীর খুচরা বাজারে দেখা যায়, দোকানিদের কাছে তুরস্ক ও ভারতের পেঁয়াজ থাকলেও পরিমাণে কম। দেশি পেঁয়াজের চেয়ে আমদানি করা পেঁয়াজের দামও কিছুটা কম।

 

এদিন ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪৫ টাকা এবং তুরস্কের বড় আকারের পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।

মালিবাগ বাজারের খুচরা বিক্রেতা আশিকুর রহমান জানান, নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসার পর জানুয়ারির শুরু থেকে দাম কমতে থাকে এবং মাসের শেষ সপ্তাহে প্রতি কেজি ২৫-৩০ টাকায় নেমে যায়।

তিনি জানান, গত কয়েক দিন ধরে আবারও দাম বাড়তে শুরু করেছে। বাজারে এখন ভালো মানের প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়।

 

“এই সময়ে দেশি পেঁয়াজ ওঠার মৌসুম বলে বিদেশি পেঁয়াজ আমদানি কমে যায়। কিন্তু বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ হঠাৎ করে কমে গেছে। এদিকে আমদানি করা পেঁয়াজও কম।”

এই দুই সংকটের কারণে দাম বেড়েছে জানালেও ‘এত বেশি’ বাড়ার পেছনে বড় ব্যবসায়ীদের ‘কারসাজি’ থাকতে পারে বলে মনে করেন এই খুচরা ব্যবসায়ী।

ঢাকায় পেঁয়াজের বড় আড়ত শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “এখন আড়তে যে পেঁয়াজ আছে সবই মুড়িকাটা, কিন্তু পেঁয়াজের আমদানি (সরবরাহ) কমে গেছে, যে কারণে দাম বেড়ে গেছে।”

তিনি জানান, প্রতি কেজি মুড়িকাটা পেঁয়াজের পাইকারি দর ৩৯ থেকে ৪০ টাকা এবং দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা।

বাজারে গত এক মাস ধরে বেড়েছে চাল, ভোজ্য তেল, মশুর ডালসহ আরও বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম।

ব্যবসায়ীরা জানান, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট এবং নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭২ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ৬২ থেকে ৭০ টাকা।

মাঝারি আকারের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা, এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা। এছাড়া মোটা জাতের স্বর্ণা চাল এখন ৪৬ থেকে ৫০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।

ভোজ্য তেলের মধ্যে খোলা সয়াবিন তেল এবং পাম অয়েলের দাম তুলনামূলক বেশি বেড়েছে।

প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬০ থেকে ১৬৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫৫ থেকে ১৬৫ টাকা। কোম্পানি ভেদে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৮ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও একই দামে বিক্রি হয়।

পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৭৬০ থেকে ৭৯০ টাকায়,গত সপ্তাহে ছিল ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা। প্রতি লিটার সুপার পাম অয়েলের দাম ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা।

এদিকে বড় দানার মশুর ডালের দাম কিছুটা কমলেও ছোট দানার ডালের দাম বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বড় দানার মশুর ডাল কেজিতে ২ টাকা কমে ১০০ থেকে ১০৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ছোট দানার মশুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা।

তবে দাম কমেছে রসুনের। দেশি রসুন কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে, আর আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। গত সপ্তাহ আমদানি করা রসুন বিক্রি হয়েছে ১২৫ থেকে ১৪০ টাকা।